স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই আমার লেখালেখির যাত্রা শুরু। ছয়টা কবিতার বই, দুটো কাব্যগ্রন্থ ও হাতে গোনা কয়েকটা প্রবন্ধ তখন আমার ভান্ডারে মজুদ। পত্রিকায় কিছু ছাপা হয়েছিল, বাকিগুলো অপ্রকাশিত ছিল। অতপর সম্ভবত চারটা বাদে এদেশের সব পত্রিকার প্রকাশ সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল। আমার লেখালেখিরও পরিসমাপ্তি ঘটলো। জীবন চলার খরস্রোতে ভেসে লেখাগুলো দিনে দিনে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কখনো সখের বশবর্তী হয়ে কিছু লেখালেখি করতাম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হাতে কিছু সময় পাওয়াতে আবার লেখালেখি শুরু করলাম। এখনোও যখনই সময় পাই লিখি। ২০২২ সাল থেকে প্রবন্ধগুলো আবার পত্রিকায় প্রকাশ শুরু হলো। অধিকাংশ লেখা দৈনিক যুগান্তরের উপসম্পাদকীয় কলামে প্রকাশিত। এজন্য আমি দৈনিক যুগান্তর কর্তৃপক্ষের কাছে এবং বিশেষভাবে সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এবারে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর মূল কপি আমি যথাসম্ভব সংগ্রহে রাখি।
পত্রিকা অফিসের বিবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে লেখার সকল অংশ তাদের পক্ষে সবসময় প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। একটা কারণ আমি নিজে অবহিত; আমার লেখার ভাষা কাকের কণ্ঠস্বরকেও হার মানায়। অনেকের বিরক্তির কারণ ঘটায়। লেখনীর মতো ধারালো অস্ত্র আর কীইবা আছে! সেজন্য এবং অন্য আরো কারণে পত্রিকা অফিসে কিছু কেটেছেঁটে বাদ দেওয়া হয়। এখানে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো আমি যেভাবে পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম, তার পুরোটাই আসলরূপে অসম্পাদিত অবস্থায় রয়ে গেছে। বানানেও অনেক ভুলচুক রয়ে গেছে। অনুসন্ধিৎসু পাঠকসমাজ বিষয়টাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন; প্রবন্ধের মূল ধারণা পড়ে দেখতে পারেন। এগুলো এদেশের ‘শিক্ষা-সমাজ-দেশ’ নিয়ে লেখা। প্রবন্ধগুলো প্রতিটাই চিন্তা-উদ্রেককারী। এগুলো পড়লে কেউ আমার ‘পথরেখা’র সন্ধান পাবেন বলে আমি আশাবাদী। তবে আমার ‘পথরেখা’র পুরো সন্ধান পেতে গেলে সাহিত্য আকারে প্রকাশিত আমার লেখা সবটাই পড়তে হবে। পাঠকসমাজে আমার লেখার কিছু ভক্তও আছেন। প্রতিনিয়ত গঠনমূলক উপদেশের জন্য আমি তাদের কাছে ঋণী। ভক্ত পাঠকসমাজের আশা পূরণ হলেই আমি খুশি।
হাসনান আহমেদ